রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তে দৃষ্টিহীন রিফাতের অভিনব প্রতিবাদ

যানজট নিরসনে রাজধানীর বড় তিন সড়কে রিকশাসহ অন্যান্য অবৈধ ও অননুমোদিত যানবাহন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল অথরিটি (ডিটিসিএ)। এতে বিপাকে পড়েছেন প্রতিবন্ধী মানুষরা। প্রতিবন্ধীরা বিভিন্ন মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদও জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, রিকশা হলো বর্তমান সময়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। গণপরিবহনে প্রতিবন্ধীরা চাইলেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে যেতে পারে না, সেখানে রিকশায় চাইলেই সুন্দরভাবে যাতায়াত করা যায়। কিন্তু রিকশা বন্ধ হলে আরও ভোগান্তিতে পড়বে প্রতিবন্ধীরা।

রিকশা বন্ধ হলে আমি চলব কীসে?—এমন প্রশ্ন সংবলিত একটি প্ল্যাকার্ড হাতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রিফাত পাশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু তার উত্তর এখন পর্যন্ত মেলেনি। রিফাতের সঙ্গে আরও অনেকেই এমন প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে দাঁড়িয়েছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে।

৩ জুলাই ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল অথোরিটির (ডিটিসিএ) এক বৈঠকে রাজধানীর যানজট নিরসনে পৃথক তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিকশা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামী ৭ জুলাই থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে গাবতলী থেকে আসাদগেট হয়ে আজিমপুর পর্যন্ত (মিরপুর সড়ক), সায়েন্সল্যাব থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এবং কুড়িল থেকে রামপুরা ও খিলগাঁও হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত মূল সড়কে কোনো ধরনের রিকশা চলাচল করতে পারবে না।

গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কগুলোতে হঠাৎ রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে নারীদের মাঝে। যারা গণপরিবহনের হয়রানি এড়িয়ে চলতে রিকশায় যাতায়াত করেন। কথা হয় ইডেন কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শবনম মুশতারীর সঙ্গে, যিনি কলেজ আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মিত রিকশা ব্যবহার করেন। ইডেন কলেজ আজিমপুরে অবস্থিত আর শবনম থাকেন ধানমন্ডিতে। এ বিষয়ে তিনি জানান, ধানমন্ডি থেকে আজিমপুর পর্যন্ত গণপরিবহন বলতে আছে শুধু ১৩ নম্বর বাস। অনেক সময় এই বাসে জায়গা পাওয়া যায় না। তা ছাড়া বাসে চলাচল করার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা বিপত্তি। তাই ভরসা একমাত্র রিকশা।

শবনম মুশতারী বলেন, ‘এখন যদি রিকশা বন্ধ করে দেওয়া হয় তবে আমরা চলাচল করব কীভাবে? অনেক সময় ক্লাস-পরীক্ষার তাড়া থাকে, সেসময় রিকশা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কেউ কেউ এ নিয়ে মন্তব্য করছেন। রুবানা শারমিন নামে একজন লিখেছেন, ‘বড় বোনের বাসা বাড্ডা। ভাগনে পড়ে বারিধারার স্কুলে। ভ্যান মিস হলে সকালে বোন বা দুলাভাই রিকশায় ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসে। এ রাস্তায় রিকশা বন্ধ হলে ওই অফিস টাইমে বইয়ের বস্তাসহ ছেলেকে নিয়ে কীভাবে যাবে।’

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রিকশা বন্ধে সুখ পান। প্রাইভেটকার বন্ধে কেন চুপ যান? যানজটের কারণ প্রাইভেটকার।’

রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তকে হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন মো. শহিদুল ইসলাম। রিকশা বন্ধ নিয়ে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের মন্তব্যে তিনি লিখেছেন, এটা একটা হঠকারী সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে খিলগ‍াঁও থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত। কারণ এটা ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল এলাকা। এখানে খিলগাঁও রেলগেট, সায়েদাবাদ, টিটিপাড়া, কমলাপুরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে যাওয়ার জন্য একমাত্র রিকশাই ভরসা।

তিনি দাবি করেছেন, এই সড়ক ব্যবহার করে স্কুল, কলেজ, অফিস পাড়ায় যাওয়া হয়, তাই যেন এই সড়কে রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়।

রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন জানান, ধীর গতির রিকশার কারণেই ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানজট হচ্ছে। আর এসবের বেশিরভাগেরই অনুমোদন নেই। যানজট কমাতে প্রাথমিকভাবে উল্লেখিত তিন সড়কে রিকশা বন্ধ করা হবে।

তবে রিকশা বন্ধ করা হলেও যেন নগরবাসীর চলাচলে সমস্যা না হয়, সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে জানান সাঈদ খোকন।

যানজট কমানোর নামে রিকশা চলাচল বন্ধ করাই একমাত্র সমাধান নয় বলে মনে করছেন নগরবাসী। তারা জানান, বিকল্প কোনো পরিবহনের ব্যবস্থা না করে এবং নারী, শিশু ও স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পরিবহন ব্যবস্থার কথা চিন্তা না করে এমন ঘোষণা তাদেরকে হতাশ করেছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন